আন্টেরিওর ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট (এ সি এল) ইনজুরি
![]() |
আন্টেরিওর ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট বা এ সি এল ইনজুরি |
আন্টেরিওর ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট বা এ
সি এল কি?
আন্টেরিওর ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট বা এ সি এল হাঁটুতে অবস্থিত অন্যতম একটি লিগামেন্ট যা হাঁটুতে ভারসাম্য প্রদান করে। এটি হাঁটুকে সামনের দিকে সরে যেতে দেয়না যখন আমরা দৌড়াই অথবা খেলতে যাই।যদি ইনজুরি হয় তবে সার্জারির মাধ্যমে এটি রিকন্সট্রাকশান করা হাটুর স্ট্যাবিলিটি বা ভারসাম্য ফেরানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
![]() |
এ সি এল ইনজুরির কারণ |
এ সি এল ইনজুরির
কারণঃ
লিগামেন্ট হল একধরনের রাবার বা ব্যন্ড এর মত বস্তু যা প্রয়োজন অনুযায়ী সম্প্রসারিত হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরের সকল লিগামেন্ট এর একটি নির্দিষ্ট সম্প্রসারণ ক্ষমতা আছে। যখন এর সম্প্রসারণ ক্ষমতার বাহিরে এটিতে টান পড়ে তখনই এটি ছিঁড়ে যায় অথবা এর সম্প্রসারণ ক্ষমতা হারিয়ে বেশি লম্বা হয়ে যায়। ফলে এর কার্যক্ষমতা আগের মত থাকেনা।
আঘাত এর কারন হতে পারে কন্ট্রাক্ট বা নন কন্ট্রাক্ট ইনজুরি
![]() |
নন কন্ট্রাক্ট ইনজুরি |
নন কন্ট্রাক্ট ইনজুরিঃ
নন
কন্ট্রাক্ট ইনজুরির বা সরাসরি আঘাত না লেগে ইনজুরি হতে পারে কয়েকটি কারণে
- খেলতে বা দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ করে দিক পরিবর্তনের সময় পড়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে হাঁটু মচকে যাওয়া
- চলতে বা দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গিয়ে পড়ে যাওয়া
- গর্তে পা পড়ে যাওয়া
- পিচ্ছিল সার্ফেসে পা পিছলে পড়ে যাওয়া
- ফুটবল খেলায় ট্র্যাকল করার সময় হাঁটু মচকে যাওয়া
- উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি
![]() |
কন্ট্রাক্ট ইনজুরি |
কন্ট্রাক্ট ইনজুরিঃ
কন্ট্রাক্ট
ইনজুরি বা সরাসরি আঘাত লেগে ইনজুরি সাধারণত হতে পারে খেলার সময় অন্য খেলোয়াড় এর
সঙ্গে ধাক্কা লেগে বা কোন শক্ত বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে।
এ সি এল ইনজুরি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় যেমন বাস্কেটবল, ফুটবল, স্কিইং এবং রাগবি তে অংশগ্রহণকারী দের মাঝে বেশী দেখা যায়।
সিম্টম বা উপসর্গঃ
১।হাঁটুতে
তীব্র ব্যাথা হওয়া ও হাঁটু ফুলে যাওয়া সাধারণত ইনজুরির সাথে সাথেই এটি শুরু হয়
২। হাঁটুতে
ভারসাম্য না পাওয়া
৩। হাঁটুতে
ক্লিক বা কটকট শব্দ করা
৪। হাঁটতে
গেলে হাঁটুতে অস্বাভাবিক অনুভূতি হওয়া
৫। হাঁটু
ভাঁজ করতে তীব্র ব্যাথা অনুভব হওয়া
৬। পুনরায় খেলতে
গেলে,অসমান বা পিচ্ছিল জায়গায় চলতে গেলে হাঁটুতে ভারসাম্য না পাওয়া ইত্যাদি।
ক্লিনক্যালি ৩ ধরণের এ সি এল ইনজুরি পাওয়া
যায়
![]() |
পার্শিয়াল বা পুরোপুরি না ছেঁড়া এ সি এল |
এ সি এল এর দুটি বান্ডেল থাকে আন্টেরোমিডিয়াল ও পস্টেরোল্যাটেরাল বান্ডেল
- গ্রেড-১ সাধারণত লিগামেন্ট টি অনেক বেশী টান খেয়ে সাভাবিকের থেকে বেশী প্রসারিত হয়ে যায় কিন্তু ছিঁড়ে না হাঁটুতে সাধারণত ভারসাম্য থাকে
- গ্রেড ২ – পার্শিয়াল বা পুরোপুরি না ছেঁড়া,আন্টেরোমিডিয়াল ও পস্টেরোল্যাটেরাল বান্ডেল এর যেকোনো একটি ছেঁড়া
- গ্রেড-৩ কমপ্লিট বা পুরো ছেঁড়া সাথে হাঁটুতে একদম ভারসাম্য না থাকা
![]() |
কমপ্লিট বা পুরো ছেঁড়া এ সি এল |
এ সি এল
ইনজুরি হলে রোগী এক সরল রেখা বরাবর হাঁটতে বা দৌড়াতে পারে তবে যখনি ক্রস লেগিং
করতে যায় তখন পড়ে যায়,পারে না।
এ সি এল ইনজুরি ডায়াগনোসিসঃ
ল্যাকম্যান
টেস্ট ও পিভট শিফট টেস্ট যেকোনো একটি বা দুটিই পজেটিভ হতে পারে। পিভট শিফট টেস্ট
সাধারণত অনেক দিনের পুরনো ইনজুরি বা বেশী মাত্রায় ইনজুরি থাকলে পাওয়া যায়।
![]() |
এ সি এল ইনজুরি এম আর আই ফাইন্ডিংস |
এছারাও এক্সরে ও এম আর আই থেকেও ডায়াগনোসিস কনফার্ম করা
যায় তবে এর গ্রেড নির্ধারণ করার জন্য এম আর
আই সর্বোত্তম পরীক্ষা। এম আর আই তে করনো অব্লিক ভিউ নামক এক বিশেষ অ্যাঙ্গেল এ ছবি
নিতে হয়,গ্রেড বুঝার জন্য। অব্লিক ভিউ তে হাঁটু একটু বাঁকা করে তির্যক ভাবে ইমেজ
নিতে হয়।
এছাড়া
ইনজুরির পরেই হাঁটু থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে জয়েন্ট ফ্লুইড বের করে যদি ব্লাড স্টেইন্ড
বা রক্ত রঞ্জিত লাল পাওয়া যায় তবে এ সি এল ইনজুরি হবার সম্ভাবনা ধারণা করা যায়। এই টেস্ট বর্তমানে
সাধারণত খুব একটা করা হয় না কারন এতে হাঁটুতে ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা থাকে।
চিকিৎসাঃ
চিকিৎসা নির্ভর করে কোন গ্রেড এর ইনজুরি হয়েছে তার উপর
- গ্রেড ১ঃ ২-৩ সপ্তাহ বিশ্রাম, খেলাধুলা না করা
- টাণ্ডা সেঁক দেয়া
- হিঞ্জ নী ব্রেস ব্যাবহার করা
- সঙ্গে ফিজিও থেরাপি যেমন হ্যামস্ট্রিং ও কোয়াড্রিসেপস স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ এরও প্রয়োজন পড়ে স্টিফনেস প্রিভেনশন এর জন্য।
- পা বালিশের উপর উঁচু করে রাখা বিশ্রামের সময় এবং এর সঙ্গে ব্যাথার ওষুধ খেলে ২-৩ সপ্তাহে রোগী ভালো হয়ে যায়।সঙ্গে ফিজিও থেরাপি যেমন হ্যামস্ট্রিং ও কোয়াড্রিসেপস স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ এরও প্রয়োজন পড়ে স্টিফনেস প্রিভেনশন এর জন্য।
- গ্রেড ২ঃ
- সিলেক্টিভ বান্ডেল রিপেয়ার সার্জারির ও পোস্ট অপারেশন ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়
- গ্রেড ৩ঃ
- অ্যানাটমিক্যাল এ সি এল রিকন্সট্রাকশন সার্জারির পোস্ট অপারেশন ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয় বয়স ওজন ও শারীরিক চাহিদার প্রেক্ষিতে সিঙ্গেল বা ডাবল বান্ডেল রিকন্সট্রাকশন সার্জারি করা যেতে পারে।
সার্জারি পরবর্তী উপদেশঃ
![]() |
এ সি এল ইনজুরিরফিজিও থেরাপি বা ব্যায়াম |
২ সপ্তাহ
হোমবাউন্ড বা ঘরের ভেতরে থাকতে হয় ইনফেকশন প্রতিরোধ এর জন্য এবং ক্রাচ বা এলবো
স্টিক নিয়ে চলতে হয়। ৪ সপ্তাহ পরে থেকে ক্রাচ বা এলবো স্টিক আর লাগেনা, সাপোর্ট
ছাড়াই হাঁটা যায়। শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ৩-৬ মাস পর থেকে খেলাধুলা ও নিয়মিত
ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি শুরু করা যায়।তবে সার্জারি পরবর্তী পুরো সময়টাই নিয়মিত হোম
বাউন্ড ফিজিও থেরাপি(হ্যামস্ট্রিং,কোয়াড্রিসেপস স্ট্রেচিং ও হাঁটু নিয়মিত পুরোপুরি
ভাঁজ করার এক্সারসাইজ) করতে হয়।
2 Comments
সিঙ্গেল বা ডাবল বান্ডেল রিকন্সট্রাকশন সার্জারির খরচ কেমন??
ReplyDeletefind best specialist doctor list in bangladesh
ReplyDelete